বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬

তমলুকে কালী পূজো

ব্লগে প্রথম লেখা,কি নিয়ে শুরু করা যায় ভাবছিলাম, ঘটনাক্রমে পড়ে গেল কালীপূজো। তমলুকের আজও যেকয়টি কারণের জন্য সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে,তার মধ্যে কালীপূজো একটি। গোটা তমলুক শহর জুড়ে অন্তত ৭০টি বড় পূজো হয়, আশেপাশের গ্রাম শহর থেকে ধর্মনির্বিশেষে লোকেরা ভীড় জমায় এই তমলুক শহরে,টানা চারদিন ধরে সারারাতব্যপী চলতে থাকে এই কালীপূজোর উৎসব।
অথচ দীর্ঘকাল এই প্রাচীন শহরে কোনো কালীপূজো এমনকি দূর্গাপূজোও হয়নি। কথিত আছে শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বর্গভীমা সতীর একান্নপীঠের এক অংশ। তাই শহরে (পায়রাটুঙির খাল থেকে শংকরআড়া খাল) অন্য শক্তির পূজো অর্থাৎ দশমহাবিদ্যার(মতান্তরে ২৭ টি শক্তি) আরাধনা নিষিদ্ধ ছিল।
তাহলে কারা শুরু করলো তমলুকে কালীপূজো? উত্তর খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম আবাসবাড়ির ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবে। শহরের একপ্রান্তে ঐতিহাসিক বাণপুকুরের পাশে দোতালা ক্লাব, প্রতিষ্ঠা ১৯৪২ সালে,প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আর পাঁচটি ক্লাবের মতই ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য। শুনেছিলাম পায়রাটুঙির ভাঙন এর হাত থেকে আবাসবাড়িকে বাঁচাতে শক্তির আরাধনা শুরু হয়েছিল,যেমনভাবে মানুষের বিশ্বাস দেবী বর্গভীমা যুগ যুগ ধরে রূপনারায়নের হাত থেকে তমলুক শহরকে রক্ষা করে এসেছে। তবে ক্লাবের সদস্যরা সেই গল্পকথা উড়িয়ে দিলেন, বললেন নিছক দুঃসাহসিকতার বশেই ততকালীন সদস্যরা কালীপূজো শুরু করেছিলেন,১৯৫২ সালে। তখন আবাসবাড়ি প্রায় পুরোটাই ছিল ঘন বাঁশঝাড়ে ঢাকা,যেখানে দিনের বেলাও লোকে একা পেরোতে ভয় পেতো,তমলুক মর্গটাও তখন এখানেই ছিল! বিরোধিতাও এসেছিল ভালোমতই, তমলুকবাসীরা পরের একবছর নাকি ভয়ংকর কিছু ঘটার দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছিল,তবে যখন কিছু হল না, পুরোদমেই কালীপূজো শুরু হয় দিকে দিকে। অবশ্য ক্লাবের শুরু করে যাওয়া নিয়ম এখনো চলে আসছে গোটা টাউন জুড়েই, কালীপূজো শুরু করার আগে দেবী বর্গভীমার অনুমতি নিতে হয়, সেই উপলক্ষে সমস্ত পূজোরই জমকালো শোভাযাত্রা বেরোয়। যদিও আগের মত শাড়িপরিহিতা মহিলাদের শোভাযাত্রা আর দেখা যায় না।
সেইসময় এরপর ধীরে ধীরে কালীপূজো শুরু হয় বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাব, হরির বাজারের পূজো,কল্পতরু, টিএফসি ক্লাবের হাত ধরে। তমলুকে দূর্গাপূজোও ১৯৫৬ সালে প্রথম শুরু করে এই ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবই।
তবে এখনো থিম নিয়ে মাথা ঘামাননা এই প্রাচীন পূজো উদ্যোক্তারা। উত্তরায়ণ ক্লাবের এক উদ্যোক্তার মতে নব্বই এর দশকে প্রথম থিম নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা তারাই করেন। আজকের সময়ে তমলুকে থিম জনপ্রিয় করে তোলে চলন্তিকার পাশে স্টেল্লারোসা ক্লাব, পুরনো রাজবাড়ির আদলে প্যান্ডেল তৈরি হয়েছিল, তারপর ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে থিম পূজো। তবে আজকে থিম পূজোয় নিজস্বতার খুব অভাব,মূলতঃ কোলকাতার বিভিন্ন দূর্গাপূজোর থিমই নিয়ে আসা হয়। অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই,তা নয়, এদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী গৌরাংগ কুইলাও রয়েছেন, এমনকি বিখ্যাত শিল্পী সনাতন দিন্দার প্রথম কাজ ছিল এই তমলুক শহরেই।
(চলবে)
অভিষেক তুঙ্গ
সহযোগীতায় অনির্বাণ সেনাপতি


২টি মন্তব্য:

  1. অভিষেক,
    খুব সুন্দর ছবির কালেকশন|
    মাঝের ওই জলাশয়টি কেন দেওয়া হয়েছে?

    উত্তরমুছুন
  2. বাণপুকুরের পাশে ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাব

    উত্তরমুছুন